যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবে না সরকার

0

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কয়েকজনের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ এবং তৎপর। একের পর এক বিভিন্ন মার্কিন কূটনীতিক এবং প্রতিনিধিরা ঢাকায় আসছেন। তারা সরকার এবং বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ক্রমশ প্রকাশ্য হচ্ছে। তবে এ সমস্ত চাপ এবং হুমকি স্বস্তেও বাংলাদেশ সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করবে না।

সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ইরান বা উত্তর কোরিয়া হবে না। বাংলাদেশ কম্বোডিয়ার পথেও হাটবে না। বাংলাদেশ তার নিজস্ব পথেই চলবে।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেকগুলো বাণিজ্যিক ব্যাপার রয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দু দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক যেন কোনো অবস্থাতেই ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে সরকার সজাগ রয়েছে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ অন্যান্য দেশগুলোর মত সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধীতা করবে না। চীন-রাশিয়া বলয়েও প্রবেশ করবে না। বাংলাদেশ তার মৌলিক পররাষ্ট্রনীতি, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’ এই নীতি নিয়েই অগ্রসর হবে।

বাংলাদেশ সরকার যেমন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত করবে, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ আলোচনা এবং সমঝোতার পথও খোলা রাখবে।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, মাঠের রাজনীতিতে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করা হবে এবং এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা সরকার বা নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না এমন বক্তব্য দিয়ে কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করা হবে। ঠিক তেমনিভাবে সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক এবং ব্যক্তিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজ অব্যাহত রাখবে।

জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আসন্ন যে আলাপ আলোচনা এবং সংলাপ সেগুলো অব্যাহত রাখবে। এর পাশাপাশি সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে তাদের মধ্যে অন্যতম রয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আরও কয়েকজন। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করবেন।

এছাড়াও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গেও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা যারা যোগাযোগ করতেন তারা যোগাযোগ অব্যাহত রাখবেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদকের বাইরে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং মোহাম্মদ আলী আরাফাত মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখবেন।

সরকার একটি মধ্য অবস্থা চাচ্ছে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক কঠোর অবস্থানে না যায়। সরকারের কৌশল হলো এরকম একটি সমঝোতামূলক পরিবেশের মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন করা এবং নির্বাচনের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে সমঝোতার চেষ্টা করা।

ড. ইউনূসের বিষয়টি নিয়েও সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের কেউ কেউ ইউনূসের মামলার ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করার পক্ষে। তবে সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ যেন মার্কিন বিরোধী একটি রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত না হয়, সেটির ব্যাপারে সজাগ সরকার। কারণ, এরকম একটি অবস্থানে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দেয় সেটির ধাক্কা বাংলাদেশ সামাল দিতে পারবে না। তাই, নরমে গরমে সম্পর্কের ধারা এগিয়ে নেয়াই হচ্ছে সরকারের কৌশল।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat