বাণিজ্যমন্ত্রীর কথা কেউ মানে না, পদত্যাগ করা উচিত : নজিবুল বশর
বাণিজ্যমন্ত্রীর কথা কেউ মানে না, তার পদত্যাগ করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন ১৪ দলীয় জোটের শরীক ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে একটি ডিম কিনে খাওয়ার অবস্থা নেই মানুষের। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি যতবার বলে, ততবার দাম বাড়ে। আলুর দাম বেঁধে দিয়েছেন, কেউ কী মানছে? মানছে না। টিপু মুনশির নিজেরই পদত্যাগ করা উচিত। আমি হলে পদত্যাগ করতাম। আমার কথা যদি জনগণ না মানে। তার (বাণিজ্যমন্ত্রী) কথাতো মানছে না কেউ।
দেশে সিন্ডিকেট কারসাজি হচ্ছে অভিযোগ করে ভান্ডারী বলেন, ‘টিপু মুনশির বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই, সরকারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ নেই। অভিযোগ একটাই, যারা সিন্ডিকেট ব্যবসা করে, তারা হাতেগোনা পনের বিশজন। এদের হাতে পুরো দেশ জিম্মি। এদের সবাই চেনে। বর্তমান সরকার নয়, কোনো সরকারের আমলে এদের কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আরেকটি অদৃশ্য শক্তি। মনে হয়, সরকারের মধ্যে আরেকটি সরকার হচ্ছে তারা (সিন্ডিকেট)। সিন্ডিকেটের কাউকে আমরা গ্রেফতার করি না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে কে কে সিন্ডিকেট ব্যবসা করে? এটা আমরা সবাই জানি। ঢাকায় কারা করে, সেটাও জানি। বাংলাদেশে বড় বড় ব্যবসায়ীরা করছেন। আগে ছিল পাঁচ সাতজন। এখন না হয় একত্রিশ জন হয়েছে! এর বেশিতো নেই। মূল যারা সিন্ডিকেট, যারা দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। আপনার পিতা বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন। আপনি কাউকে ভয় করেন না। এমনকি স্যাংসনের ভয়ও করেন না। সে জায়গায় সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে পাত্তা দেওয়া কেন? সিন্ডিকেটে সরকারের কোনো মন্ত্রী কিংবা কেউ জড়িত থাকলে তাদের বের করে দেন। জনগণতো সিন্ডিকেটকে চেনে। সাংবাদিকরাও চেনে।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তারা লেখেন, তারা জানেন। ঢাকার যারা বড় বড় আছেন (সাংবাদিক), তারা লেখেন না। কারণ তারা ওই সিন্ডিকেট থেকে বড় বড় বিজ্ঞাপন পান।
সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বিএনপিকেও চাঁদা দেয় দাবি করে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, স্বচ্ছতা যদি আনতে হয় সরকারকেও আনতে হবে, বিরোধীদলকেও আনতে হবে। এই সিন্ডিকেটে যারা আছে, তারা বিএনপিসহ বিরোধীদলকে মাসে চাঁদা দেয়। বিএনপি এ পর্যন্ত কোনো সিন্ডিকেটের নাম নিয়েছে? নেয়নি। জামায়াত নিয়েছে? আওয়ামী লীগ নাম নিয়েছে? নেয়নি। জাতীয় পার্টি কারো নাম নিয়েছে? নেয় নাই। আমি নিচ্ছি না। আমি নিলে বলবে। কিন্তু আমি চাঁদা নিচ্ছি না। কারণ আমি ওদের মতো বড় দল নই।’
সম্প্রতি তার বক্তব্যের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা লিখেছেন, তাদের উদ্দেশ্যে ভাণ্ডারী বলেন, আমি জোটের নেতা, আওয়ামী লীগের নেতা নই। আমার দল বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। জোটের নেতৃত্বে আমরা চলি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন সমালোচনা করার জন্য। বিরোধিতার খাতিরে বিরোধী না, সমালোচনা হচ্ছে শুধরানোর জন্য। আমরা শুধরে দেওয়ার জন্য বলবো।
তিনি আরও বলেন, জামায়াত স্বাধীনতার শত্রু। জামায়াত এ দেশের শত্রু। আমার দলের মামলায় জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধের জন্য আমার দল মামলা করে। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম কীভাবে চলছে। জামায়াতের প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ভূমিকা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। আমি সেই জায়গা থেকে ওনাকে সরে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।
সভায় আরও বক্তব্য দেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব, ইউএনও মো. সাব্বির রাহমান সানি, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন্নাহার মুক্তা, পৌর মেয়র এ কে জাহেদ চৌধুরী, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিম, ডা. জয়নাল আবেদিন মুহুরী, রাজীব আচার্য্য।