বাংলাদেশ ওয়াশিংটন, লন্ডনের কথায় চলবে না, আমরা তাদের খাই না, পরি না : পরিকল্পনামন্ত্রী
পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান এমপি বলেছেন, ‘দেশে যে সকল বিষয়ে আমাদের মধ্যে ভিন্ন মত আছে, যারই ভিন্ন মত থাকুক, আসুন আমরা আলোচনা করি। আমরা দেশে বসে কথা বলে আমাদের সমস্যা সমাধান করব। ওয়াশিংটনে নয় লন্ডনে নয়, ওখানে আছে আমাদের বন্ধু, তারা আমাদেরকে পরিচালনা করে না, আমরা তাদের খাই না, তারা বরং আমাদের খেয়ে অতদূর এগিয়েছে। তাই বাংলাদেশ তাদের কথায় চলবে না। আমরা এখন চাই- আমাদের ঘরে আমরা যেন আমাদের মতো করে বাঁচতে পারি, আমাদের সম্মান নিয়ে, মর্যাদা নিয়ে একটা মানবিক উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি।’
বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ময়মনসিংহ গীতিকা প্রকাশনার শত বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পরিকল্পনা মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ব্রিটিশের সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি করে স্বাধীনতা আনি নাই। ভারত চুক্তি করে স্বাধীনতা এনেছে। পাকিস্তান চুক্তি করে স্বাধীনতা এনেছে। আমরা রক্ত দিয়ে, সংগ্রাম করে, প্রাণ দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। আমাদের দরকার দেশে খেয়ে পরে বাঁচার সংস্থান। এজন্য প্রয়োজন উন্নয়ন।
সে উন্নয়নের জন্য আমরা নায়ক পেয়েছি শেখ হাসিনাকে। অত্যন্ত সাহসী, তার পিতার মতো।
পরিকল্পনা মন্ত্রী সরকারের উন্নয়ন ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু বানিয়েছে, টানেল বানিয়েছে, মেট্রো রেল বানিয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করেছে, এর জন্য শেখ হাসিনাকে দরকার। অন্যদেরকেও দরকার, যেকোনো ব্যক্তি কাজ করতে পারবে। কিন্তু শেখ হাসিনা বেটার করতে পারবে। তার যোগ্যতা আছে, জনগণের প্রতি ভালোবাসা আছে, স্নেহ আছে, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে।
তিনি এ সময় বলেন, বাংলার বাইরে তার বসবাসের কোন জায়গা নেই। বাংলার বাইরে শেখ হাসিনার বসবাসের জায়গা নেই, আমি আপনাদের দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি। তাই আমি নিবেদন করব হাওরের মানুষ হিসেবে, গ্রামের সন্তান হিসেবে, শেখ হাসিনা পিছিয়ে পড়া মানুষ, কম আয়ের মানুষ, কৃষক, মজুর, মহিলা সকল মানুষের প্রতি তার দায়বদ্ধতা আছে। তাই তাকে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি আপনাদের প্রতি নিবেদন রাখবো। আসুন আমরা সবাই একসাথে বসে কাজ করি। তাকে কাজ করার সুযোগ দেই।
অনুষ্ঠানে আব্দুল মান্নান জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, যেকোন সংকটকালে আমাদের দরকার জাতীয় ঐক্য, আমাদের ঐক্য দরকার উন্নয়নের জন্য, দারিদ্র্য কমাবার জন্য, শিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য, ভালো স্বাস্থ্যের জন্য, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ যাওয়া আসা নয়, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ অবস্থানের জন্য, আরো সুন্দর শহর, সুন্দর বন্দর, সুন্দর সকল কিছুর জন্য আমরা নানা দিকে উন্নয়ন করছি। আরো অনেক কাজ আমরা করব। আমাদের কাজ অনেক বাকি আছে। এজন্য প্রয়োজন স্থিতিশীল পরিবেশ। দেশের শান্তি শৃঙ্খলা, অহেতুক বিবাদ নয়, দোষারোপ নয়, ব্যক্তিগত ঈর্ষা থেকে, ব্যক্তিগত জেলাসি থেকে, আঙ্গুর ফল টক মনোভাব থেকে যেন আমরা কারো পিছে না লাগি, আঙ্গুর ফল টক মানে কি আপনি করে ফেলেছেন আমরা করতে পারি নাই। এই যে ট্রেডিশন, শেখ হাসিনা কতকিছু বানিয়েছে আমরা পারি নাই। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী বক্তৃতা দেওয়ার সময় দুইবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে তিনি কিছুটা বিব্রত হন।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের সহযোগিতায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ সংস্কৃতিক ফোরাম আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ জাকিয়া নূর লিপি এবং অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. আবদুস সামাদ।
এতে অন্যদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার), কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান শেলী, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম কিশোরগঞ্জের সভাপতি মু. আ লতিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।আলোচনা সভা শেষে ময়মনসিংহ গীতিকা ভিত্তিক নৃত্যনাট্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।