ড. ইউনূসের উপর রাজনৈতিক নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাকায় গণঅধিকারের মশাল মিছিল

নোবেলজয়ী বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মাদ ইউনূসের উপর বর্তমান সরকারের জুডিশিয়াল হয়রানি ও রাজনৈতিক নিপীড়নের প্রতিবাদে রাজধানীতে মশাল মিছিল করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
বৃহস্প্রতিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ডক্টর রেজা কিবরিয়া ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসানের নেতৃত্ব এ মিছিল হয়। মিছিল দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রিতম জামান টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা বলেন, ‘আমার ভাই-আমার গর্ব- ডক্টর ইউনুস ডক্টর ইউনুস। ডক্টর ইউনুসের কিছু হলে- জ্বলবে আগুন হাসিনার ঘরে। চীন-ভারতের দালালেরা- হুঁশিয়ার সাবধান। রুশ-ভারতের দালালেরা-হুঁশিয়ারি সাবধান। আওয়ামী লীগের দালালেরা-হুঁশিয়ার সাবধান ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মিছিল পূর্বে ডক্টর রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আজ পরিকল্পিতভাবে ডক্টর ইউনুসকে নিশ্চিহ্ন করার পায়তারা করছর এই অবৈধ ভোটারবিহীন সরকার। আর সে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে ইন্ধন দিচ্ছে একনায়কতান্ত্রিক, আধিপত্যবাদী, আগ্রাসণবাদী, সম্প্রসারণবাদী, স্বৈরাচারী,
ফ্যাসিস্ট দেশি-বিদেশি বামপন্থী শক্তি। তারা ডক্টর মুহাম্মাদ ইউনূসের মতো বৈশ্বিক আলোকবর্তিকাকে যেকোনো মূল্যে নিভিয়ে দিতে চায়।”
রেজা কিবরিয়া বলেন, এ মাটির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান, বিশ্ববরেণ্য ডক্টর ইউনুসকে এভাবে রাজনৈতিক নিপীড়ন ও হয়রানির মূলত কারণটা হচ্ছে; তিনি বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকার, সুশাসন ও জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। এজন্য ইর্ষান্বিত দেশি-বিদেশি সংঘবদ্ধ শকুনদের কুদৃষ্টি পড়েছে তার উপর। আমরা বলতে চাই, শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ডক্টর ইউনুসের উপর হওয়া এসব জুলুম-নিষ্ঠুরতার জবাব দিবো। তার সম্মান রক্ষায় রাস্তায় প্রতিবাদ অব্যাহত রাখবো। প্রয়োজনে রাজপথে রক্ত দিবো ইনশাআল্লাহ।
গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসান বলেন, ‘ডক্টর ইউনুসের শত্রুরা অনেক বড় মাপের দেশি-বিদেশি অপশক্তি। তাদের শিকড় অনেক গভীরে। ওই অপশক্তিগুলো আমাদের পূর্ব পুরুষদেরও শত্রু ছিল। তারা মূলত বাংলাদেশ ভূখন্ডেরই শত্রু।’
ফারুক হাসান বলেন, এই দেশি-বিদেশি শত্রুরা এক সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে শহীদ করেছে। জামায়াতে ইসলামীসহ এদেশের ধর্মীয় ডানপন্থীদের গুম-খুন-নিপীড়ন চালিয়েই যাচ্ছে। তারা বর্তমানে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে বিনা চিকিৎসায় আটকে রেখেছে। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে মিথ্যা মামলার সাজা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করেছে। মূল কথা, তারা এ দেশে ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী কোনো শক্তিকেই উঠতে দিচ্ছে না। সুযোগ পেলেই ডানপন্থীদের নির্মূল করে দিচ্ছে।
ফারুক হাসান আরো বলেন, ‘এখন তারা আদালতকে ব্যবহার করে ডক্টর মুহাম্মাদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাজা দিয়ে তাকেও বিতর্কিত, অপমানিত করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে এবং তাকে আগামী দিনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ গ্রহণ থেকে দূরে রাখতে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। আদালত কর্তৃক তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মিথ্যা সাজা দেয়ার গভীর পাঁয়তারা করছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, ‘এ স্বাধীন দেশে চীন, রাশিয়া ও ভারতের বামপন্থী ইন্ধনে তাঁবেদারি চলবে না। এদেশে মানুষ জীবন দিয়ে হলেও তাদের হারানো গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধার করবে। ডক্টর ইউনুসের সম্মান রক্ষা করবে।’
বক্তব্যে পরিষদের অন্যান্য নেতারা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের নাম না পরিবর্তন করে একেবারেই আইনটি বাতিল করার দাবি জানান। বিগত ১৫ বছরে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানান। এস আলম গ্রুপের ১০ হাজার কোটি টাকা পাচারে অভিযোগ ও বিশেষ বিবেচনায় বেক্সিমকো গ্রুপের ২২ হাজার কোটি লোন নেওয়ার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি করেন।
এছাড়াও, অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১ দফা দাবি মেনে নেওয়া, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, জামায়াতের আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমান ও হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি করেন গণঅধিকার পরিষদ।
মিছিল আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অবসর) মিয়া মশিউজ্জামান, বিগ্রেডিয়ার (অবসর) জেনারেল হাবিবুর রহমান, সাবেক জেলা দায়রাজজ শামসুল আলম, সাদ্দাম হোসেন, সাবেক জাজ শামসুল আলম খান চৌধুরী, ব্যারিস্টার জিসান মহসীন, যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ আতাউল্লাহ খান, তারেক রহমান, সাকিব হোসেন, সামসুদ্দিন, খায়রুল কবির, সদস্য ইসমাইল হোসেন বন্ধন, জিয়াউর রহমান, শামীম রেজা, মোজাম্মেল মিয়াজি, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ।