সাইবার নিরাপত্তা আইনে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারের বিষয়টি রয়ে গেছে,‘মানহানি হলো আমার আর ক্ষতিপূরণ পেলো রাষ্ট্র, এটা তো ন্যায় বিচার হলো না
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাস্তি কমানোর মতো বিষয়টি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ নামে নতুন আইনে অন্তর্ভূক্ত করা হলেও এটি আসলে খুব একটা তাৎপর্যপূর্ণ নয়। বরং যেসব ধারা নিয়ে বিতর্ক ছিল সেগুলো এখনো বহাল তবিয়তেই রয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের যে জায়গাগুলো নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল সে জায়গাগুলো সাইবার নিরাপত্তা আইনেও রয়ে গেছে। যার ফলে এটি অপপ্রয়োগেরও সুযোগ রয়েছে এবং এটি দিয়ে নিবর্তনমূলক কার্যক্রম করারও সুযোগ রয়ে গেছে।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে তার জায়গায় সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে ভিন্ন একটি আইন আনার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী সেপ্টেম্বরে এই আইনটি পাসের জন্য সংসদে তোলা হবে।
আগের আইনের কাঠামোয় অ-জামিনযোগ্য ধারা থাকলেও সেগুলো নতুন আইনে বেশিরভাগই জামিনযোগ্য করা হয়েছে। তবে ১৭, ১৯, ২১, ২৭, ৩০ ও ৩৩ ধারা এখনো অ-জামিনযোগ্য রয়েছে।
গুণগত পরিবর্তন বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, দুই-একটা ক্ষেত্রে শাস্তির মেয়াদ কমানো হয়েছে। আর দ্বিতীয়বার অপরাধের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ শাস্তির বিধান রদ করা হয়েছে। তবে এতে, এই আইনের অপপ্রয়োগের শিকার ব্যক্তিদের আশাবাদী হওয়ার মতো কোন বিষয় নেই বলে মনে করেন তিনি। “যাদের আগে সাত বছর জেল হতো এখন তার তিন বছর জেল হবে, এটা মনে করে তো খুব বেশি পুলকিত হওয়ার জায়গা আমি দেখছি না।”
‘অবমাননা’ আর ‘মানহানি’র মতো বিষয়গুলো দেওয়ানি আইনে মামলা হওয়া উচিত উল্লেখ করে শাহদীন মালিক বলেন, “দেওয়ানি ক্ষতির ব্যাপারগুলো আমরা ফৌজদারি আইনে নিয়ে এসে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করছি। মূল আপত্তি হলো ওই জায়গায়। ওই জায়গাগুলোতে কোন পরিবর্তন হয়নি।” মালিক বলেন, মানহানির মামলা ফৌজদারি আইনে করা হলে তাতে যে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে তা ওই ব্যক্তি পাবে না, বরং সেটা পাবে রাষ্ট্র। আর এই একই মামলা দেওয়ানি আইনে করা হলে ক্ষতিপূরণ পাবে ব্যক্তি।
মানবাধিকারকর্মী নুর খান লিটন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রতিস্থাপন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রবর্তন করার মানে এই নয় যে,এটা নিবর্তনমূলক হবে না, কারণ পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারের মতো বিষয়টি এই আইনেও রয়ে গেছে।
মানহানির ক্ষেত্রে ডিএসএ এর ২৯ ধারায় যে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ছিল সেটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এর পরিবর্তে জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। নুর খান লিটন বলেন, “অর্থদণ্ডের যে পরিমাণটা দিয়েছে সেটা বাংলাদেশের কতজন মানুষ দিতে পারবে?” তার মতে, যাদের অর্থ দেয়ার সামর্থ্য আছে তারা অর্থ দিয়ে আইনের ধারা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। আর যাদের অর্থ নেই তাদের কারাবাস করতে হবে।
মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, এ ধরণের আইনের পরিবর্তন আনার আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনা করা উচিত ছিল যেটি সরকার করেনি।
শাহদীন মালিক বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনটি মূলত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আইনগত বৈধতা বিষয়ক। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে কম্পিউটার ব্যবহার করে করা অপরাধ বিষয়ক। ফলে দুটোই আইনই বহাল রয়েছে।
আগামী সেপ্টেম্বরে সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি রহিত হয়ে যাবে বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে শাহদীন মালিক বলেন, রহিত করার মানে হলো, যেদিন থেকে নতুন আইন কার্যকর হবে সেদিন থেকেই আগের আইনটিতে আর কোন মামলা হবে না। নতুন অপরাধের জন্য নতুন আইনে মামলা ও বিচার হবে। তবে আইন রহিত করা মানে সেই আইনটি বাতিল করা নয় বরং হেফাজত করা হয়। হেফাজত করার মানে হচ্ছে পুরনো আইনের অধীনে যে মামলাগুলো শুরু হয়েছে সেই মামলাগুলোর জন্য পুরনো আইন বহাল থাকবে। “ওই মামলাগুলোর জন্য ওই আইন এখনো জীবিত আছে, সেগুলোর বিচার ওই আইন অনুযায়ীই হবে,” বলেন শাহদীন মালিক।