লক ডাউনে ভালোবাসা

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পুরোনো কর্মস্হলে ফিরে এল নীলা।এখানে তার ভালবাসার মঈন আছে।সাত বছর আগে মঈনের সাথে সম্পর্কটা কিছুটা এগিয়ে গেলেও পরর্বীতে মানসিক টানপোড়েনের কারনে এ সম্পর্কটা আর এগিয়ে যায়নি।পুরোনো কর্মস্হলে এসে মঈন কে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে যায় নীলা।বেশ কয়েক বার নিজের দিকে আকর্ষণ করারর চেষ্টা করলেও কি এক অভিমানে মঈন সাড়া দেয় নি নীলার ডাকে।মঈনের মন চায়নি আবার কোন সম্পর্কে জড়াতে।এভাবে দিন এগিয়ে যায় দুজন দুজন কে দূর থেকে অনুভব করেআর ভালোবাসে।দিন দিন ভাল লাগা ও ভালোবাসা বেড়ে যায় নীলার। বিনিদ্র রজনী তে দিন কাটায় নীলা আর ভাবে কিভাবে ফিরে পাবে তার পুরোনো প্রেমকে।মানসিক যন্ত্রনায় দগ্ধ হতে হতে অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় নীলা তার
ভালবাসার কথা খুলে বলবে মঈন কে। এ ভাবেই মানসিক উৎকন্ঠায় পেরিয়ে যায় আরো কিছু দিন। সারা বিশ্বে যখন করোনা মহামরী আকার ধারন করে অফিস আদালতসহ সকলশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।সীমিত পরিসরে চলছে অফিস আদালত।অফিসে কাজের চাপ ও কম, এমনই পরিবেশে মনকে শান্ত করে সিদ্ধান্ত নেয় নীলা আজই খুলে বলবে তার মনে সব কথা। পুরোনো প্রেমের দাবি নিয়ে অধিকার নিয়ে দাড়াবে তার মঈনের সামনে।যদি এত টুকু ভালোবেসে থাকে সে নীলার সত্যিকারের ভালোবাসাকে ফেরাতে পারবে না সে।
পরের দিন একটু বেলা করে অফিসে যায় নীলা অফিসে গিয়ে টুকটাক কাজ তাড়া তাড়ি শেষ করে মঈনের রুমে গিয়ে তাকে বলে একটু আসেন তো আমার রুমে।মঈন রুমে ঢুকলে৷ তাকে বসতে বলে অফিসের কিছু কথা আলোচনা করে হঠাৎ নীলা প্রশ্ন করে তোমার সাথে কি কার সম্পর্ক আছে?মঈন বলে কেন বলুন তো? না বলছিলাম আকাশের তারা যেমন সত্য তোমার সাথে আমার একটা ভাললাগার সম্পর্ক ছিল সেটাও সত্য। তাচ্ছিল্যের ভংগিতে মঈন উঠে চলে যেতে চায়।নীলা বলে একটু বস না। এমন করো কেন? তুমি যে প্রতিদিন সকালে আমার রুমের দরজায় ফুল দিতে সেটা কি মিথ্যে ছিল? দূজনে মিলে মুভি দেখতে দেখতে কত গল্প করেছি তা কি তুমি ভুলে গেছ? ধপ করে মঈন চেয়ারে বসে বলে মিথ্যে ছিল না কিছুই তুমি আর এগিয়ে আসনি। আমাকে ভূল বুঝে দূরে চলে গেছ।নীলা গভীর প্রেম নিয়ে মঈনের দিকে তাকিয়ে বলল কই আমার প্রশ্নের উওর তো দিলে না?মঈন বললো, আসলে কি জানো বিগত দুই থেকে তিন বছর আমি কোন মেয়ের দিকে তাকাই নি।তার আগে দুই এক জনের সাথে কথা হতো এই পর্যন্তই।সম্পর্ক কোনটাই আর আগায়নি।আমি তোমার সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছি,তুমি সাড়া দাওনি। মঈন প্রশ্ন করে আচছা নীলা, তুমি আমার জীবন থেকে চলে গিয়েছিলে কেন?তখন কি আমি কোন অন্যায় আবদার করেছিলাম,বা কোন অন্যায় করেছিলাম?আর এখন ই বা আমার মত সামান্য মানুষের প্রতি তোমার এত আগ্রহ কেন? দেখেঅবাক হয়েছি,কেনআমাকে তোমার ভাল লেগেছে তা আজও জানলাম না। মঈনের কথা শুনে স্মৃতির অতলে তলিয়ে গেল নীলা। আজথেকে সাত বছর আগে প্রথম দেখাতেই সুদর্শন,সুপুরুষ,আকর্ষনীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মঈনকেভাল লেগে যায় নীলার।তারপর ভাললাগা ভালোবাসায় পরিনত হয়।
মঈন কে নিয়ে প্রতিদিন স্বপ্ন দেখে হাতে হাত ধরে নদীর পারে হাটছে,গল্প করছে।স্বপ্নটা কে বাস্তবে পরিনত করার জন্যই মঈনের হাতে হাত রেখেছিল নীলা।আর ঠিক তখন ই অন্যএ বদলীর অর্ডার হয়ে গেল তার।
অগ্যতা আর কি করে কিছু না ভেবে না বলেই চলে যায় নতুন কর্ম স্হলে। সেখানে গিয়ে সে প্রতিক্ষায় থাকে মঈন হয়তো তার সাথে যোগাযোগ করবে।কিন্তু মঈনের সময় হয়নি নীলার সাথে দুটো কথাবলার,একটু নিরিবিলিতে দেখা করার।ভালবাসার উপেক্ষায় খুব ইমোশোনাল হয়ে পড়ে নীলা।সেই সময় প্রতিদিন প্রতিক্ষায় থাকতসে।প্রতিক্ষয় থাকতে থাকতে চোখের পানি অভিমানের দলা পাকিয়ে পাথর হয়ে বুকের মধ্যেই চেপে বসেথাকে তার। উদ্যোগী হয়ে সেও আর যোগাযোগ করেনি মঈনের সাথে।মাঝে শুনে ছিল ঐ অফিসের ই নতুন আসা সুন্দরী কলিগের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয়েছে,তাই অভিমানে আর যোগাযোগ রাখে নি, হঠাৎ দেখা হলেওতেমন কোন কথা হয়নি তাদের মাঝে। এভাবেই পাঁচ টি বছর কেটে যায়।নীলার উদাসী হওয়া দেখে মঈন বললো কি হল?কি ভাবছ?সম্মিত ফিরে পেয়ে নীলা উওর দিল,আসলে তুমি আর যোগাযোগ রাখনি চোখের আড়াল ছিলাম তাই মনেরও আড়ালে রেখেছ।আমার জায়গায় অন্য কাউকে বসিয়েছ,আমাকে ভূলে গেছ।একথা শুনে মঈন রেগে বলে উঠল ফালতু ধারনা তোমার। তুমিই দূরত্ব বজায় রেখেছ।আমি আর কার সাথে সম্পর্ক করিনি।আমি ভীতু মানুষ তোমার ভালবাসা বুঝলেও সাহস হয়নি।তুমি যদি সত্যি চাইতে তাহলে দেখা হত কথা হত। এখন যেমন তুমি সাহস করে এগিয়ে এসেছ।এছাড়া তোমার আগ্রহ আগের মত ছিল কি না তা কোন ভাবেই জানতে পারি নি।আমার কেন যেন মনে হত এমন কিছু করেছি যার কারনে তুমি দূরত্ব বজায় রেখেছ।মঈনের কথা শুনে নীলা বললো তোমার জন্য এত গুলো বছর কত অপেক্ষা করেছি,কত কষ্ট পেয়েছি তোমাকে কিছুই বুঝতে দেই নাই এখানে এসে বুঝতে পারলাম সেই তুমি আমারই আছ আভিমান করে আছ, সে দিন ই সিদ্ধান্ত নিলাম আর অপেক্ষা না করে তোমার সাথে আলোচনা করব।আমার ভালবাসার কষ্টের কথা তোমাকে খুলে বলব।তোমাকে নিবেদন করে বলব;আমি সব সময় তোমার পাশে থাকতে চাই।তোমায় ভালবাসতে চাই।আমার সমস্ত ভালবাসা শুদু তোমার জন্য। একথা শুনে মঈন খুব ইমোশোনাল হয়ে পড়ল, বললো একটা বিষয় কি জান, এত বছরেও কার সাথে সম্পর্ক করিনি বা হয়নি হয়তো কাজের চাপে তোমাকে সাময়িক ভূলে গেছি কিন্তু হারিয়ে যাইনি। এখনওতোমারই আছি।তোমার জন্য কি করতে পারি,যা বলবে সব করবো। শুধু তুমি আমার পাশে থাকবে।আমায় ভালোবাসবে। নীলার হাতে হাত রেখে নতুন করে আবার ভালবাসার ওয়াদা করে নিজের রুমে চলে যায় মঈন।অনেক দিন পর দুজনের মনেই প্রশান্তি আসে।মনেমনে দুজন দুজনকে সুখী করার অংগীকার করে।নীলার চোখে পানি টলোমলো করে।সে নতুন করে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখে।সে স্বপ্নের নায়ক নায়িকা মঈন আর নীলা।
সারা পৃথিবী জুড়ে লক ডাউনের কারনে অফিসের কাজের গতিশীলতা কমে গেছে অনেক।কাজের চাপ নেই বললেই চলে।আজ নীলার সকাল সকাল অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই। আলমারী থেকে দুই, তিন টা শাড়ি বের করে আয়নায় মেলে ধরে নিজেকে।কোনোটি তাকে মানাবে ঘুরিয়ে ফিরে দেখে তারপর একটা নীল রংএর জর্জেট পছন্দকরে সুন্দর করে পড়েনেয় নীলা। মানান সই টিপ দেয়। শেষ বার নিজেকে আয়নায় দেখে নিয়ে অফিসের পথে রওনা হয়।অফিসে ঢুকেই নিজের রুমের দরজা খোলার আগে পাশের রুমে মঈন কে দেখে নেয় এক পলক। নীলার আগমনের শব্দ পেয়ে মঈন নীলার রুমে আসে।রুমে ঢুকতেই নীলা ঈঙ্গিতে মঈন কে দরজার পাশে দাড়াতে বলে,দরজাটা একটু ভিজিয়ে ই সে ঝাপ দেয় মঈনের বুকে।মঈন থতমত খেয়ে আড়ষ্ট হয়ে দাড়িয়ে থাকে।কি করবে বুঝতে পারে না।
মঈনের বুকে কিছুক্ষন মাথা রেখে নিজেকে শান্ত করে নিজের চেয়ারে বসে নীলা । মঈন দূর থেকেই তাকায় নীলার দিকে দেখতে পায় নীলার চোখে ভালবাসার অশ্রু।মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নীলার দিকে।নীলাও মঈনের চোখে ভালবাসার দূর্বলতা দেখতে পায়।দুজনই অনুভব করে একের প্রতি অপরের ভালোবাসার নির্ভরতা,সুখ,শান্তি।দূজনের মনেইআবার নতুন করে ভালবাসার শুভ সূচনা হলো।ভালোবাসার প্রশান্তিতে দুজনের মন ই ভরে গেল।নিজের রুমে ফিরে মঈন নীলাকে ম্যাসেজ পাঠায় আমার ভালোবাসার সবটাই তোমাকে দিলাম।যদি কোন অপূর্ণতা থাকে তাহলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিও অথবা বলে দিও অপূর্ণতা গুলো।হৃদয়ের কাছাকাছি থেকে তোমায় ভালবাসব। তোমার যত্ন নিব।তা না হলে ভালোবাসাটা ঝাপসা হয়ে যাবে।
ম্যাসেজের উওরে নীলা লিখল মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করি মঈনের কাছ থেকে পাওয়া ভালবাসা থেকে তিনি যেন বঞ্চিতনা করেন।এভাবেই দুজনের দিন কেটে যায়।দুটি মন অফিসের দুটি রুমে বসে ভালবাসার খুন সুটিতে মেতে উঠে।অফিসের কাজ আর একঘেয়েমি মনে হয় না। মঈনের মন টা সব সময় প্রফুল্ল থাকে।অফিসের কাজে সে আরো মনোযোগী হয়।এমনিতেই সে অফিসের কাজে খুব সিরিয়স এবং খুব পারদর্শী। নীলা নতুন করে স্বপ্ন দেখে মঈন কে নিয়ে। এভাবেই অফিসের চারদেয়ালের মধ্যেই তাদের ভালোবাসার দিন গুলো কেটেযায়।এক দিন নীলা মঈন কে বলে তুমি এত ভাল কাজ বুঝ অন্য জায়গায় ভাল কিছু করার চেষ্টা কর ।তুমি তো কম্পিউটারের অনেক কিছু জান।একটা আইটি ফার্ম দিলে হয়তো অনেক ভাল কিছু করবে।সেখানে অনেক লোক কম্পিউটারে কাজ করবে। অনেক লোকের উপকার হবে। তোমার যা মেধা তা দিয়ে একটু সহযোগিতা পেলে ভাল কিছু করতে পারবে।মঈন বললো আচছাচিন্তা করে দেখি কি করা যায়।নীলার স্বপ্নটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য মঈন চিন্তাভাবনা করতে থাকে।নীলাওসাহস যুগিয়ে চলছে।বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগের ফলে সত্যিসত্যি একদিন মঈন নতুন কিছু করার পথ পেল।নীলার স্বপ্নপূরণ করে একটি আইটি ফার্মের মালিক হয়।শূধুমাএ সততা ও নিষ্টার গুনেই মঈন তার প্রতিষ্ঠান কে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।সবদিক গুছিয়ে নিয়ে এবার সে নীলাকে নিয়ে ঘর করার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে ছোট্ট সুন্দর সংসারের,তাদের একটি সুন্দর মেয়ে হবে তাকে ঘিরেই হবে তাদের সব আনন্দ বেদনা।প্রতিদিন মঈন যখন অফিসে যাবে নীলা গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে তাকে একটু জরিয়ে ধরে বিদায় জানাবে। বিয়ের প্রস্তাবটা সে নীলা কে কিভাবে দিবে, ভেবে পায় না। অনেক ভেবে নীলার জন্য একটি আংটি কিনে ধানমম্ডির লেকের পাড়ে বিকেলে দেখা করতে বলে।
শীতের কুয়াশা আচ্ছন্ন বিকেল।পাঁচটা বাজলেই সন্ধ্যা হয়ে যায়।আজ নীলা অফিস থেকে একটু আগে বেরিয়েছে।বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মঈনের পছন্দের নীল রংএর শাড়ি পরে রেডি হয়ে ধানমন্ডির লেকের পাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।দূরথেকে দেখে মঈন নীল রং এর গেঞ্জি পরে হাতে এক গুচছ গোলাপ নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে।রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে কাছে যেতেই মঈন বলে বাইকে উঠ।বাইকে উঠে নিজেকে গুছিয়ে মঈনের কাধে হাতদিয়ে শক্ত করে ধরে। মঈন বাইক চালিয়ে একটু নিরিবিলি জায়গা দেখে বাইক থামায়।বাইক থেকে দূজনে নেমে পার্কের একটা নিরিবিলি জায়গায় বেঞ্চ বসে।গোলাপ গুলো নীলার হাতে দিয়ে বলে আমার জীবন,আমার ভালোবাসা সবই তোমার জন্য।তোমাকে আমি নিজের করে পেতে চাই। আমার দায়িত্ব আমি পুরোপুরিভাবে তোমাকে দিতে চাই।একথা শুনে নীলার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে সেও একথা শুনার জন্য অনেক বছর প্রতিক্ষা করে আছে।তাই সে বললো আমিও আমার দায়িত্ব তোমাকে দিতে চাই।তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না।
নীলার কথা শুনে পকেট থেকে আংটিটা বের করে নীলার অনামিকায় পড়িয়ে দেয় মঈন।দুজনের চোখেই ভেসে উঠে নতুন জীবনের স্বপ্ন।যে স্বপ্ন দুজন মানুষ কে কাছে টানে।দীর্ঘদিন পাশে থাকার প্রেরনা যোগায়।