অনেক দূরে যেতে চাই

0
Array

প্রতিবেশীরা তাঁকে দেখে হাসিঠাট্টা করতেন। কত যে বাজে কথা শুনিয়েছেন সেই হিসাব নেই! হতাশায় খেলাই ছেড়ে দিতে

চেয়েছিলেন ইরিনা পারভীন। কিন্তু পরশু জুনিয়র আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে ত্রিমুকুট জিতে যেন নতুন জীবন পেলেন সেনাবাহিনীর শাটলার
*ঘরোয়া টুর্নামেন্টে তেমন সাফল্য নেই অথচ বড় মঞ্চে খেলতে নেমেই ত্রিমুকুট জিতলেন কেমন লাগছে?
ইরিনা পারভীন: এবারের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভালো করার আশায় কঠোর অনুশীলন করেছি। আগে কখনো ত্রিমুকুট জিতিনি। তাই আমার আনন্দটা একটু বেশিই। এর আগে শুধু জাতীয় জুনিয়রে মহিলা দ্বৈতে রানার্সআপ এবং স্বাধীনতা দিবস টুর্নামেন্টে একক ও দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।

 

*ব্যাডমিন্টনে শাপলা আক্তার, এলিনা সুলতানা, নাবিলা আক্তারদের বাইরে কেউ উঠে আসছেন না নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

ইরিনা: সবে সাফল্য পেতে শুরু করেছি। অনেক দূরে যেতে চাই। এসএ গেমসে সোনা জয়ের স্বপ্ন দেখি। আমাকে আরও অনুশীলন করতে হবে।

*কীভাবে ব্যাডমিন্টনে এলেন?

ইরিনা: আমার বাড়ি পাবনা। একবার আম্মুর সঙ্গে নানাবাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে দূরসম্পর্কের এক মামা আমার খেলা দেখে স্থানীয় স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক হাওয়া ম্যাডামকে বলেছিলেন। ম্যাডাম আমার খেলা দেখে ভীষণ মুগ্ধ। তিনি আম্মুকে রাজি করান, যাতে ঢাকায় গিয়ে খেলতে পারি। আমার এখানে খেলতে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আম্মুর।

*এরপর

ইরিনা: এরপর প্রথমে ম্যাডাম আমাকে স্থানীয় কোচ খুরশীদ স্যারের অধীনে অনুশীলনের জন্য পাঠান। পরে নুরু ভাই, জাহিদুল হক স্যার, জিলানী স্যাররাও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

*কোনো বিদেশি কোচ পেয়েছেন?

ইরিনা: ঢাকায় ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার এক কোচের অধীনে জুনিয়র ক্যাম্পে অনুশীলন করেছিলাম। এরপর কোনো বিদেশি কোচ পাইনি। বিদেশি কোচের অধীনে অনুশীলন করতে পারলে হয়তো আরও ভালো ফল হতো।

*হতাশায় নাকি একবার খেলা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন?

ইরিনা: ঘটনাটা দুই বছর আগের। খেলাধুলার সুবাদেই সেনাবাহিনীতে চাকরি পেলাম। অথচ এর আগে মাঝেমধ্যেই মনে হতো খেলাটা ছেড়ে দেব। খেলতে মোটেও ভালো লাগত না। ভাবতাম আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। মনে হতো একটুও খেলতে পারি না। সবাই আমার চেয়ে বেশি পারে। তবে সেনাবাহিনীর চাকরির পর নতুন জীবন পেলাম। নতুন করে সব শুরু করলাম। এখন আগের চেয়ে অনেক আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

*একটা চাকরিই তাহলে জীবন বদলে দিল?

ইরিনা: এটা বলতেই পারি। আমি চাকরি পাওয়ার আগে বাবা এলাকায় ফেরি করে সবজি বেচতেন। মাকে নিয়ে তিন ভাইবোনের সংসারটা টেনেটুনে চলত। এখন চাকরির সুবাদে নির্ভার হয়ে খেলি। মেয়ে হয়ে বাবাকে সাহায্য করছি। পরিবারেও সচ্ছলতা এসেছে। শুধু তাই নয়, এলাকার অনেক মা এসে আমার কাছে বলে, তোমার মতো আমার মেয়েকেও খেলাধুলায় পাঠাতে চাই।

*আপনার কোনো প্রিয় শাটলার আছে?

ইরিনা: দেশে শাপলা আপু (জাতীয় চ্যাম্পিয়ন শাপলা আক্তার), বিদেশে ভারতের পিভি সিন্ধু। মাঝে মাঝে ভাবি, সিন্ধুর মতো যদি খেলতে পারতাম। তাঁর মতো একদিন অলিম্পিকে গিয়েও পদক জয়ের স্বপ্ন দেখি।

About Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat
  • Click to Chat